হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সঙ্কট, চিকিৎসা সেবা ব্যহত

সোনিয়া আফরিন।।
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার আড়াই লাখেরও বেশি মানুষের স্বাস্থ্য সেবার প্রধান ‘বাতিঘর’ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের বিশাল জনগোষ্ঠীর সঠিক স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার এই ‘বাতিঘর’ বর্তমানে নিজেই নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ৩০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য হয়ে পড়ে আছে। জনবলের চরম সংকটের কারণে কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা। এতে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সেবা নিতে আসা রোগীরা উন্নত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে যেতে হচ্ছে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে।

এদিকে, লোকবলের সঙ্কটের কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন বিকলের পর মেরমত করা হলেও টেকনোলজিস্ট সংকটের কারনে দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর ধরে এক্স-রে মেশিন অচল অবস্থায় পড়ে আছে।

সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে গিয়ে জানা গেছে, গত প্রায় ৮বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে থাকা এক্স-রে মেশিনটি এখনো চালু করা যায়নি। লোকবল নিয়োগের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এছাড়া বেশ কয়েক বছর আগে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি মেশিন স্থাপন করা হলেও লোকবলের অভাবে সেটিও এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী ও চিকিৎসকদেরও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৫০ শয্যায় উত্তীর্ণ করা হয়। ওই সময় প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে একটি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়।

জানাগেছে, ২০০৮ সালের শেষের দিকে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

সূত্রে জানা যায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জনবল সংকট। মোট ১০টি জুনিয়র কনসাল্টেন্ট পদের বিপরীতে ৯ টি পদ সহ বিভিন্ন পদে প্রায় ৩০ কর্মকর্তা-কর্মচারি পদ বছরের পর বছর ধরে শূন্য হয়ে পড়ে আছে। যার কারনে অনেক সময় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রোগীদের সঠিক সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে সবচেয়ে বেশি সংকট হচ্ছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের। তাই রোগীদের সমস্যা আরও প্রকোট হচ্ছে।

এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, শরীরে বিভিন্নভাবে আঘাত প্রাপ্ত কোন রোগী বা হাড় ভাঙা রোগীরা এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসলে এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন চালু না থাকায় বাধ্য হয়ে পাশেই ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে গিয়ে এসব পরীক্ষা করাতে হয়। আর এই সুযোগে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় ওই ক্লিনিক ব্যবসায়ীরা ও দালালরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মোহাম্মদ আবদুছ ছালাম সিকদার বলেন, আমাদের হাসপাতালে মেশিন আছে। কিন্তু যারা এগুলো চালাবে তারাই তো নেই। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জনবল সংকট। বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেশিরভাগ পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য হয়ে পড়ে আছে। তবে এতো সংকটের পরেও আমরা কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকারিভাবেই লোকবল নিয়োগ বন্ধ। যার কারণে এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আমরা কিছুদিন আগেও কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে লোকবল নিয়োগের জন্য বলেছি। কেন্দ্রীয়ভাবে লোকবল নিয়োগ হয়ে গেলে সারাদেশের সঙ্গে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরও জনবল সংকটের সমস্যা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page